Japonkotha

Wednesday, 27 April 2016


জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত
April 21 at 1:00am
ইলিশ
রবিবার সকালটায় বিছানা ছেড়ে একটু গড়িমসি করে উঠলেও এমন কিছু যায় আসে না ।মানসী কিছু বলবে না সেটা জানা কথা । ও নাইটি  ছেড়ে শাড়ি পরে মুখেচোখে জল দেয় আর ঘর ঝাড়ু দিতে দিতেই সেটা মুখে শুষিয়ে নেয় । গ্যাস ধরায়, ছেলেমেয়ে দুটোকে দেবার জন্য দুধ জ্বাল দেয় । নিজের জন্য এক কাপ ফিকে লাল চা করেই ভাতের জল বসায়। তারপর অভ্যাসবশত বসে যায় ফ্রিজের সবজি ভর্তি বাস্কেট নিয়ে ।অফিস না থাকুক, সকালে সবার মুখে দুটো তুলে তো দিতে হবে
অথচ পাশের বাড়ির সুন্দরদির মতো সে আরামে দিন কাটাতে পারত। সুন্দরদি গত বারো বছর ধরে একটা কলেজে পার্টটাইম করে হাতখরচ বাদ দিয়েও বছরে বেশ কিছু টাকা ব্যাঙ্কে জমাচ্ছেন। আর মানসী আমাদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে সই দিয়ে এম.এ পাশ হোম মিনিস্টার। তবে সেটা কোন ব্যাপার নয়। ছুটির দিন। আমি যদি এখন বাজারে গিয়ে পছন্দসই ইলিশটা পেয়ে যাই, আর এনে ফেলে দিই মানসীর সামনে -- কোন সমস্যা হবে না। হয়ত জিজ্ঞেস করবে,-- 'মাছটা সেদ্ধ খাবে না ঝোল করে দেব।' টাটকা ইলিশ হলে আমার আবার দুটোই প্রিয়। তবে আবদারের লিস্টে এক নম্বরে থাকবে সর্ষে বাটা -- শুকনো শুকনো -- ওপরে একটা টসটসে লাল কাঁচা লঙ্কা। উসপ -- জিভে জল এসে যাচ্ছে এখনই। মানসী রাঁধে ভালো। আসলে সে দেখতে ভালো, তাই তার সবটাই ভালো। মনকে সব সময় ভরিয়ে রাখে। দুপুরে খেতে বসেছি, শুধু মাছ-ভাত। কোলের টুকরোগুলো ঝোলে, পিঠের পিসগুলো ভাপে রসময় হয়ে গরম ভাতের পাশে চুপচাপ। যেকোনো মুহুর্তে আমার রসনাকে তৃপ্ত করতে পারে -- ভাবতেই ভালো লাগছে। ইলিশের আমেজই আলাদা। আহা, কাঁচাই বা কি, আর সর্ষে-ঝোলেই বা কি -- রূপ একেবারে ঝরে পড়ছে যেন। মনকে সব সময় ভরিয়ে রাখে। মাছ এনে দেবার পর মানসী তার নরম গোলগাল ফর্সা দুটো হাতে সেটাকে কাটছে, গন্ধ বেরোচ্ছে ইলিশের -- একটু পরে কড়াইতে দিলে আরও সুস্বাদু গন্ধ .... আহা, এর সঙ্গে মশলায়-নুনে-ঝালে মানসীর মনের মাধুরী তার সরু রূপসী আঙুল বেয়ে মাছে মিশছে...... দৃশ্যটা ভীষণ সিনেমাটিক। সে যেন ঠিক রোববারের সাপলিমেন্টারিতে গল্পের গৃহবধু। কিন্তু দাদা,গল্পের গৃহবধূটিকে এতো অভিমানী করে দেখালেন কেন আপনি? ছিঃ এতো সুন্দর একটা সংসার! এতো সুন্দরী বউ, স্বামীকে যিনি সবদিক থেকে সুখে রেখেছেন .... বলা নেই কওয়া নেই, তাকে দিয়ে সুইসাইড করালেন! তাও আবার কী! -- ভরা বর্ষায় স্বামীকে সকালে ইলিশ মাছ ভাজা-খিচুরি, আর দুপুরে সর্ষে-ইলিশ খাইয়ে দাইয়ে তারপর....! কৈফিয়তের চিরকুট টেবিলে সাজিয়ে রাখলেই বুঝি ফেমিনিজমের গল্প লেখা যায়! ভারি আপনার ইয়ে......। সুন্দরদিকে রোববারগূলোতে এই সময় ছাদে স্নানের পর চুল শুকোতে দেখা যায়। ওই তো, ছোট তোয়ালে দিয়ে সদ্য ভেজা চুল ঝাড়ছেন। তন্বী, দুধ-সাদা গাউনে প্যাঁচানো উজ্জ্বল সুখী শরীরটা এখান থেকেই স্পষ্ট। ......
নাঃ আজ ইলিশই খা
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 09:17 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Sibasish Chatterjee
April 24 at 1:12am
লেখা
শার্টের বুক পকেট থেকে খানিকটা বেরিয়ে আছে একটা মলিন চিরকূট। লোকটার চোখ উলটোনো, হুশ নেই। সবাই গোল হয়ে দেখছে, আন্দাজ করতে চাইছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। আমি হরিদাস পাইন--আমিও কি আছি ওই ভিরের মধ্যে!! হয়তো আছি। হয়তো নেই। কী যায় আসে? উটকো ঝামেলা কাঁধে নিয়ে দিনটা মিছেমিছি মাটি করার মতো লোক তো আমি নই! অতএব চিন্তা কী?
অথচ লোকটা কিন্তু আমার চেনাই! ধরুন লোকটার নাম চিনিবাস--আমাদের চিনিবাসদা। সে আমার আধা শহর আধা গ্রামের একটি বিপর্যস্ত ছাপাখানার অংশীদার। বিবাহিত কিন্তু সন্তানহীন। স্ত্রী বিয়ের দুমাসের মাথায় কমপোজিটারের সাথে ভেগে গিয়েছে। তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। খোঁজ অবশ্য কেউ নেয়ওনি।
চিনিবাসদা তারপর থেকে শুধু মদ গিলতো দিনরাত। বিধবা মা ভাত নিয়ে বসে থাকতে থাকতে একদিন স্ট্রোক করে মারা যায়। চিনিবাসদা কাঁদেনি। মায়ের পারলৌকিক কর্ম সে করেছিল কিনা সে বিষয়েও কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য কারো কাছে নেই।
রাস্তায় চিৎ হয়ে শুয়ে চিনিবাসদা মারা যাচ্ছে। সবাই গোল হয়ে দেখছে সে দৃশ্য। গাজনের সঙেরা মহাদেব, মা-কালীর মুখোশ পড়ে যখন বড় রাস্তায় নাচতো, আমরা ঠিক এভাবেই গোল হয়ে দেখতাম ছেলেবেলায়। কী আনন্দেরই যে ছিল সেই সব দিনগুলো!
হঠাৎ একজন বললো--মানুষ তো নয়, আস্ত পিঁপে একটা!
পাশ থেকে অন্যজন বললো--বউ কি কারো সাধে ভেগে যায়! সত্যি...
তৃতীয় জন একটু ভদ্দর গোছের; সে বললো--There is a limit brother...somewhere you have to draw the line...
চিনিবাসদার নাভিশ্বাসও এবার ক্রমেই স্তিমিত হয়ে আসছে। মুখ হাঁ করে শ্বাস নিচ্ছিলো সে এতোক্ষণ। এখন তাও বেশ অনিয়মিত..বোঝা যাচ্ছে হাতে আর সময় খুব নেই। যে কোনো সময় সে ঢলে পড়বে।
এ মুহুর্তে আমার মন পড়ে যাচ্ছে সঞ্জয় লীলা বনসালির 'দেবদাস' ছবিটার কথা। শেষের সেই মৃত্যুদৃশ্য! ওহ! শাহরুখের মৃত্যুতে সেদিন কেঁদে ভাসিয়ছিলাম আমরা প্রায় হলসুদ্ধ সকলেই। মনে পড়লে চোখে জল আসে এখনো।
চিনিবাসদার বুকপকেটের চিরকূট সবটাই প্রায় বেরিয়ে এসেছে দেখছি! আচ্ছা কিছু কি লেখা আছে ওতে! হয়তো আছে। হয়তো নেই। কী যায় আসে!
মরে গেলে চিরকূটটা পড়ে অধিকাংশই তো বার দুই-তিন চুক চুক করেগ জোরে পা চালিয়ে কেটে পড়বে। পাছে সৎকারের চাঁদা দিতে হয়! আমিই বা ব্যতিক্রম কীসে!
ইতিমধ্যে দুজন লাঠিধারী কোথ্থেকে উড়ে এসে হম্বিতম্বি শুরু করে দিয়েছে।
'দূর হটো দূর হটো' বলে লাঠি উঁচিয়ে এই শেষ দৃশ্যে হঠাৎ তাদের প্রবেশ। দূটো পয়সার ধান্ধা হলেও হতে পারে ভেবেছে হয়তো। যা হোক, ক্রমেই বেশ জমে উঠছে কিন্তু ব্যাপারটা!
হঠাৎ মুখবিকৃত হলো চিনিবাসদার। চিনিবাসদা কি কিছু বলতে চায়!
নাক-মুখ দিয়ে তরল গ্যাজলা গ্যাজলা কী যেন বের হয়ে আসছে। তারপরেই, যাঃ-- শ্বাস থেমে গেলো!
চিরকূটটা বেরিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ। তবে আঁঠালো গ্যাজলা লেগে ভিজে গেছে একদম। বেশ বোঝা যাচ্ছে হাতের লেখাটি অস্পষ্ট, কম্পিত। কিছুই ঠিক পড়া যাচ্ছে না।
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:37 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Bijoy Ghose
April 24 at 8:15pm
নৈঋতের সুখ দুঃখ কিংবা সেচ্ছা নির্বাসন
--------------------------------------------------------
এই পাহাড়ী এলাকায় খুব বেশি বৃষ্টি হয়।এতো বৃষ্টি হয়, নৈঋত ভাবে এটাই পৃথিবীর সবচে বেশি বৃষ্টি বহুল স্থান? আসলে তা নয়, যদিও মেঘালয়ের ঐ জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়।মেঘালয় নামটি নৈঋতের খুব ভাল লাগে।কি সুন্দর নাম? মেঘের ঘরবাড়ি তাই এই নাম।
নৈঋতের সবচেয়ে প্রিয় শহর শিলঙ।
কত বার গিয়েছে,তবু শিলঙ যেন বার বার নতুন
রূপে ধরা দেয় ।
নৈঋতের খুব ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।
তখন এক নাগাড়ে দশ বারো দিন বৃষ্টি হতো। পথ ঘাট খুব ঝক ঝকে,বৃষ্টি ধোয়া।
কোথাও কিন্তু জল জমে থাকতো না।
ছোট্ট রেলশহর। তাই একটা ছিমছাম
সাহেবি ভাবে ছিল।
নৈঋতের এই জন্ম শহরটায় নদী ঘেঁষে যেমন
একটি গীর্জা আছে তেমনই আছে শিবমন্দির।
দুটির সৌন্দর্যই অপরূপ।আসলে রূপসী বরাকের
জন্য গীর্জা কিংবা শিব মন্দিরের এই সৌন্দর্য।
নৈঋতের ছোটবেলা মানেই জাটিঙ্গার কমলা,
লক্ষ্মীপুরের আনারস আর বরাকের নানা রকম মাছ।বরাকের বড় বড় রুই মাছ বাজারে উঠতো।বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো একপাল ভেড়া।
সে সবদিনের কথা মনে পড়ে নৈঋতের। সব যেন গতজন্মের কথা।
রেল জংশন।স্টিম ইঞ্জিনের কয়লার ধোঁয়া।রেল কলোনী আর প্রিয় নদী।
একটা জনপদের আর কী চাই।
খুব বৃষ্টি।বৃষ্টিতে আবারও ধুয়ে যাচ্ছে পথ ঘাট। তবে এই পথ ঘাট নৈঋতের সেই শহরের নয়।যার সঙ্গে সে আজন্ম জড়িয়ে ছিল।
অজস্র বৃষ্টি,নৈঋত বৃষ্টিতে ভিজছে।বৃষ্টির জলে মিশে যাচ্ছে নৈঋতের চোখের জল।
নৈঋত নিজের জন্ম শহর থেকে দূরে অনেক দূরে, আজ স্বেচ্ছা নির্বাসনে
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:31 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Debleena Sengupta
April 24 at 2:46pm
ভাবীকালের মা
দেবলীনা সেনগুপ্ত
বাখারির বেড়ার ফাঁক দিয়ে দিনের প্রথম আলো চোখ ছুঁতেই সাড় পেয়ে গেল কুসুম। বহু বছরের নিয়মে অভ্যস্ত শরীর চোখ মেলে তাকাতে চাইলেও মাথা ও বুদ্ধি কাজ করছিল না ঠিকমত। আচ্ছন্নভাব ছেয়ে ছিল সমস্ত দেহে...মনেও। একটা তীব্র একটানা গোঁ গোঁ শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার ভেতর,কিন্তু তার উৎস ঠাহর করে উঠতে পারছিল না সে। আরও কিছু সময় নিশ্চল হয়ে বয়ে যেতে দেয় সে।সূর্যালোকে রাতের আঁধার কেটে যাবার মত চেতনের বিভায় ক্রমশঃ একটু একটু করে সজাগ হচ্ছিল তার বোধ ও বুদ্ধি। তাদের ইঁটভাটার বস্তি পেছনে ফেলে আধ ঘন্টার রাস্তা এগিয়ে গেলেই উড়োজাহাজের স্টেশন...জানে সে এবং বুঝতে পারে যে শব্দটা ওখান থেকেই আসছে।দিনের প্রথম বিমান আকাশে ভাসল চারদিকে শব্দ ভাসিয়ে ।অনেক চেষ্টায় ভারী হয়ে থাকা চোখের পাতা অল্প ফাঁক করল কুসুম...বিছানায় শিবনাথ নেই...কোথায় গেল? ইঁটভাটায় কাজে গেল কি? কিন্তু কই? আজ তো ইঁটভাটার বাঁশি শুনতে পায় নি কুসুম...দিনের প্রথম উড়োজাহাজ ছাড়ার আগেই তো রোজ সেই বাঁশি বাজে আর কুসুম ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়ে।আজ কি হল? হঠাৎ বিদ্দ্যুচমকের মত তার মনে হল আজ ইংরাজী মাসের ছাব্বিশ তারিখ, কি যেন একটা উৎসব আছে আজ...তার কাজের বাড়ির বৌদি বলছিল...কি যেন একটা দিবস...মনে করতে পারল না কুসুম...শুধু মনে পড়ল যে আজ ছুটি....ইঁটভাটায় আজ কাজ হবে না...তাই সকালে বাঁশি বাজেনি। তাহলে কোথায় গেল শিবনাথ? উঠে বসতে গেল কুসুম...পারল না। সমস্ত শরীরে ব্যথাবোধ। শিবনাথের হাতে মার খাওয়া তার নতুন নয়...কিন্তু গতকাল যেন খুন চেপে গিয়েছিল শিবনাথের ...কুসুমের শরীরের এক ইঞ্চি জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাবে না...যেখানে শিবনাথের থাবা আক্রমণ করেনি। অথচ সকালে চোখ মেলেই সেই শিবনাথের জন্যই উৎকণ্ঠ হল সে।
মূল শহর ছাড়িয়ে বাস রাস্তা ধরে ঘণ্টা দেড়েক গেলে এক বিশাল দীঘি। এককালে বেশ পরিস্কার জল ছিল দীঘিতে...আর প্রচুর মাছ।সারা দিন দীঘির জোলো বাতাস ঠাণ্ডা করে রাখত আশে পাশের মাটিকে। সে মাটিতেই কুসুমদের মত কিছু পরিবার বাসা বেঁধেছিল ।সে পরিবার গুলোর হয়ত বা তেমন কোন বংশ কৌলীন্য ছিল না... ছিল না শিক্ষা সংস্কৃতির সুযোগ। নিজেদের অধিকার প্রাপ্য ইত্যাদি বিষয়েও তাদের উদাসীনতা ছিল...আসলে অধিকার সাব্যস্ত করার পথ, মত ও কলাকৌশল তাদের আয়ত্বের বাইরে ছিল। তাদের সাধারণ জীবন কেটে যাচ্ছিল সাধারণ মাপের সুখ দুঃখ নিয়ে। জন্ম মৃত্যু বিবাহ ছাড়া আর তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা উৎসবের সুযোগ তাদের জীবনে ছিল না...কিন্তু স্বপ্ন ছিল কিছু কিছু...বেঁচে থাকার স্বপ্ন...হাইওয়ের পাশে থরে থরে দাঁড়িয়ে থাকা বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড গুলো সেই স্বপ্নে মায়াবী রঙ লাগিয়ে যেত প্রায় সময়ে।
কাজলকালো চোখে এমনই কিছু স্বপ্নমায়া জড়িয়ে একদিন শিবনাথের বৌ হয়ে তার ঘরে এসেছিল কুসুম। কালো অথচ দোহারা চেহারার শিবনাথকে বেশ মনে ধরেছিল তার...।দুজনের ভাব জমতেও বেশি দেরি হয়নি।শিবনাথ টুকটাক বেতের কাজ জানতো.. বাড়ীতে বসেই এটাসেটা বানাতো আর সপ্তাহে সপ্তাহে শহরে ফেরি করে আসতো সেসব। আবার কোন কোন দিন সারা দুপুর বিকেল দীঘিতে মাছ মারত।কিছু মাছ দিয়ে রাত্তিরে ঝাল রাঁধত কুসুম... বেশির ভাগটাই পরের দিন হাটে বেচে দিত শিবনাথ।আর হাটের থেকে ফেরার পথে কুসুমের জন্য নিয়ে আসতো কাঁচের চুড়ি...যে চুড়ির কিছু কিছু সে নিজেই আবার ভাঙত রাতের বিছানায়...কুসুমকে সোহাগ করতে করতে।
নতুন বিয়ের নেশা ও আড় ভাঙ্গার পর কুসুম একদিন ধরে পড়েছিল শিবনাথকে...সঙ্গিনী স্বপ্না ও কৃষ্ণার মত সেও শহরে যাবে...বাবুদের বাড়ীর ঘরকন্নার কাজ করবে। শিবনাথ কোন মতেই রাজী হয়নি। কুসুম অনেক বুঝিয়েছিল...মান করেছিল, চোখের জলও ফেলেছিল। কিন্তু শিবনাথের সেই এক গোঁ। ঘরের বউকে পরের কাজ করতে দেবে না। কুসুম তবুও আশায় আশায় ছিল...কিন্তু সেই যে একদিন কাকডাকা ভোরে ঘরের পেছনে গাছে ঝুলতে থাকা স্বপ্নার প্রাণহীন দেহটা উদ্ধার করা হল এবং কৃষ্ণার কাছ থেকে সে জানতে পারল যে কাজের বাড়ীর দাদাবাবুটির বদান্যতায় স্বপ্নার “পেট” হয়ে গিয়েছিল বলেই..., সেদিনই শিউরে উঠেছিল কুসুম, আর মনে মনে ভগবানকে শতকোটি প্রণাম জানিয়েছিল...শিবনাথকেও।
সেদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর নিজের কাজ নিয়ে ঘরের দাওয়ায় বসেছিল শিবনাথ। কুসুম ঘরের ভেতর বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছিল। কদিন ধরেই শরীরে কেমন যেন অসোয়াস্তি ভাব।খাবার খেলেই গা-পেট সব গুলিয়ে আসে।গত দুমাস ধরে ‘মাসের কাপড়’ ও লাগেনি তার। তবে কি...? শিবনাথকে দুদিন ধরেই বলবে বলবে করছে কুসুম, কিন্তু সেই যে গত পরশু শহরে গিয়েছিল শিবনাথ, তারপর থেকে সমস্ত দিন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছে, মেজাজও ঠিক নেই। কিছু বলতে গেলেই মুখ করছে। থাক রাতের বিছানায় বলবে এখন...কুসুম একটু চোখ বুজে জিরোতে চেষ্টা করে। হঠাৎ তুমুল শোরগোল এ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে সে।দ্রুত পায়ে বাইরে আসে...হে ভগবান এ কি...একটা লোহার চাকা লাগানো বিশাল দৈত্য একধার থেকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে তাদের এতদিনকার বসবাসের ঘর-দুয়ার, গৃহস্থালি । কিছু বুঝে উঠতে পারে না কুসুম...ঘোর লাগা চোখে দেখতে থাকে শিবনাথ প্রাণপণ চেষ্টায় তাদের আপাতসামান্য অথচ অসামান্য সংসারের টুকরো গুলিকে সেই লৌহ দানবের থাবা থেকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করে চলেছে।
সন্ধ্যাবেলায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে শিবনাথ যখন অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে, কুসুম বুঝতে পারে, দুদিন আগেই শহরে গিয়ে এ সর্বনাশের ইঙ্গিত পেয়েছিল তার স্বামী। কিন্তু এত দ্রুত যে তা ঘটবে,সেটা বুঝে উঠতে পারেনি। ছোট ছোট মানুষদের ছোট ছোট আশা-আকাংখা গুঁড়িয়ে দিয়ে বড়বড় মানুষদের দামী দামী জিনিস-পত্তর কেনাবেচার দোকান হবে সেখানে।
রাত পোহালেই অবশিষ্ট সংসারকে একটা বাক্সে পুরে শিবনাথের পিছু পিছু বেরিয়ে পড়েছিল কুসুম।শিবনাথের এক পরিচিত মানুষের সাহায্যে এই ইঁটভাটার বস্তির খোঁজ পেয়ে সেখানেই নতুন করে ঘরকন্না সাজিয়েছিল তারা।ইঁটভাটায় একটা কাজ ও জুটিয়ে নিয়েছিল শিবনাথ। কিন্তু যত কুসুমের শরীরে গর্ভ চিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে, ততই যেন একটু একটু করে বদলে যেতে থাকে শিবনাথ।যে দুটি হাত মনের ভালবাসা দিয়ে নমনীয় বেতের কমনীয় জিনিস বানাত, আগুনে ঝলসান ইঁট বানাতে বানাতে তারাও যেন ক্রমশঃ দানবীয় হয়ে ওঠে।কুসুম বুঝতে পারছিল, ইঁটভাটার চুল্লিতে শুধু ইঁটই পোড়ে না...প্রতিদিন ঝলসে যায় তার স্বামীর মন ও আত্মা। কিন্তু নিরূপায় সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। সন্ধ্যের পর নেশা করতেও শুরু করেছিল শিবনাথ।প্রথম প্রথম কুসুম বাধা দিতে চেষ্টা করেছিল , কিন্তু একদিন অশ্রাব্য গালিগালাজ করে তার চুলের মুঠি ধরে ঠেলে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল শিবনাথ। আর এখন তো নেশার ঘোরে মাঝে মাঝে দিন রাতের ভেদ করে উঠতে পারে না সে।
এরকম পরিস্থিতিতেই এক দিন ও সন্ধ্যার মিলন লগ্নে কুসুমের কোলে আসে পাতা। কুসুম ভেবেছিল হয়তো বা মেয়ের মুখ বাবাকে বদলে দেবে...কিন্তু না। দিনে দিনে শুধু কুসুম নয়, মেয়েও যেন অসহ্য হয়ে ওঠে শিবনাথের কাছে। আর তারপর একদিন...মেয়ে কোলে কুসুম কে বেড়িয়ে পড়তে হয় বাবুদের বাড়ীতে কাজের খোঁজে...সেইসব বাবুদের,যাদের শখ মেটানর জিনিষের দোকান গড়ে উঠেছে তাদেরই একান্ত বাসভুমিটিতে।আর সেইদিন শিবনাথও আর এগিয়ে আসে না ঘরের বউকে পরের বাড়ির কাজের বউ হওয়া থেকে আটকাতে।
আর তারপর বহু ঋতু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকে কুসুমদের বস্তি।কিন্তু কুসুমের রোজকার জীবন কোন পরিবর্তন দেখে না। ভোররাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতি পল অনুপল শুধু নিজেকে নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার পালা। তার মধ্যেই হঠাৎ একদিন চমকে গিয়ে দেখে কুসুম তার ছোট্ট পাতা কখন যেন শৈশব ও কৈশোরকে বিদায় জানিয়ে যৌবনকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।পাতা কিন্তু মেনে নেয় না শিবনাথের অনাচার। প্রায়ই বিদ্রোহ করে ,রুখে দাঁড়াতে চায় জন্মদাতার বিরুদ্ধে আর সেইসব সময়ে আরও কঠিন ও দুঃসহ হয়ে ওঠে কুসুমের বেঁচে থাকার প্রয়াস।
গতকাল কুসুমের কাজের বাড়ি থেকে ফিরতে দেরি হয়েছিল।ফেরার পথে কিছু কেনাকাটা ছিল। সেসব সেরে সে ঘরে ফেরার আগেই শিবনাথ ঘরে এসে পাতার কাছে ভাত চেয়েছিল...পাতা দেয়নি মানে দিতে পারেনি, কুসুম ফিরলে তবে রান্না হবে...বাড়িতে সব কিছুই বাড়ন্ত। সে কথাটাই পাতা শিবনাথকে বলেছিল।শিবনাথ প্রচন্ড মেজাজ দেখিয়ে গালি গালাজ সুরু করলে পাতাও আর ধৈর্য রাখতে পারেনি, সেও বাপকে যা নয় তাই বলে কথা শোনাতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তেই এক শরীর ক্লান্তি, এক পেট খিদে আর এক ব্যাগ বাজার টেনে নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল কুসুম...ব্যস...শিবনাথ আর দেরি করে নি...হিংস্র শ্বাপদের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কুসুমের উপর...যে ভাবে ইচ্ছে,যেমন ভাবে ইচ্ছে বেধড়ক, এলোপাথারি মেরেছিল কুসুমকে...যতক্ষন না কুসুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পাতা বাধা দিতে এলে মেয়েকেও দু লাথি মেরে অন্ধকারে বেরিয়ে গিয়েছিল।......
ধীরে ধীরে ঘুমের কুয়াশা থেকে বেরিয়ে আসে কুসুম। অনেক চেষ্টায় গলা দিয়ে ক্ষীণ শব্দ বের করে মেয়েকে ডাকে। বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা নিয়ে পাতা সামনে এসে দাঁড়ায়।
-কি বলবে বল?
দুর্বল হাতে মেয়ের হাত চেপে ধরে কুসুম।।চোখ দিয়ে জল গড়ায়...
-আবার কাঁদছ কেন? পাতা ফুঁসে ওঠে...খালি মার খেতে আর কাঁদতে জান, উল্টে মারতে পারনা?
-ওরকম বলিস না পাতা...
-কেন বলব না?মেয়ে-বউকে খাওয়ানোর মুরোদ নেই,আবার মারতে আসে...?ওরকম হাত ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিলে তবে ঠিক হয়...।
-কিন্তু যন্ত্রণাও যে পায় সেটা বুঝতে পারিস না?
-যন্ত্রণা?
-হ্যাঁ পাতা...আমি তো জানি... মানুষটাতো এরকম ছিল না। একমুহুর্তে বিনা দোষে যদি কেউ সর্বস্বান্ত হয় তাহলে সে কি ভীষণ যন্ত্রণা পায় বুঝিস না?
-তাই বলে তুমি কিছু বলবে না?
- আমি পারি নারে পাতা...তোর বাবা যখন আমাকে মারে আমারও খুব যন্ত্রণা হয়...কিন্তু আমি যখন সে সময় ওর চোখের দিকে তাকাই, সেখানে রাগ বা হিংসা দেখতে পাইনা রে পাতা...সেখানে শুধু অসহায় যন্ত্রণা...।আমি কেন কিছু বলি না জানিস...এখন তো তবু মানুষটা আমার কাছে তোর কাছে এসেই ভাত চায়, এখনও আমাদেরকে নিয়েই বাঁচতে চায়...কিছু বললে যদি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের মত চলে যায়,সে আমি সইতে পারব নারে পাতা...আর সবাই অবুঝ হলে যে ভগবানের সৃষ্টি থেমে যাবে...।
কুসুমের চোখ ভেঙ্গে নেমে আসা অঝোর ধারাকে পাতা দু হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে।
সেই সময়েই দূরে কোথাও ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি সহযোগে গণতন্ত্র দিবসের ত্রিবর্ণ পতাকা আকাশের নীলে মুখ তুলে তাকায়...ইঁটভাটার বাঁখারি ঘেরা বস্তি ঘরে তার কোন ব্যঞ্জনা হয়তো বা পৌঁছায় না... সেখানে তখন সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ মর্মে ,সমস্ত সৃষ্টির রক্ষাকল্পে যাবতীয় দিনযাপনজড়িত গ্লানি ও যন্ত্রণা আত্মস্থ করে বেঁচে থাকার এবং বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় নিবিড় হতে থাকে দুই মানবী মা—একজন বর্তমানের মা, অন্যজন ভাবীকালের...।
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:30 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Kapotakshi Brahmachary Chakraborty
April 24 at 1:14pm

-'কে তোমার পরাণ জেঠু?'
-'আচ্ছা মুস্কিল তো! পরাণ জেঠু, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতো যে! পরাণ জেঠুর চার মেয়ে- কলি, বুলি, অলি আর মলি, আর ওদের একমাত্র দাদা এই পরেশদা!'
-'আচ্ছা! তা আমি তো কাউকেই চিনি না!'
-'তুমি চিনবে কী করে? তুমি আমাদের বাড়িতে গেছোই বা কবার যে চিনবে?'
-'তুমিও তো নিয়ে যাও নি!'
-'তা পরাণ জেঠুর চার মেয়ে...কথায় বলে না..অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর আর অতি বড় সুন্দরী না পায় বর...'
-'ওরা খুব সুন্দরী ছিলো বুঝি?'
-' কলি ই যা একটু কালো ছিলো। বাকীরা বেশ ভালো। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে কারোরই পাত্র জুটলো না!'
-'আহা রে! তা তুমিও তো একজনকে উদ্ধার করতে পারতে!'
-'পারতাম তো! বলেও ছিলাম বুলিকে। বুলিও রাজি ছিলো। কিন্তু বাদ সাধলো ঐ পরেশ দা!'
-'কেন?'
-বলে কি না-'ভাই... তুই আমার আপনার জন, জেনেশুনে তোর ক্ষতি করি কী করে? জানিস, রাত বারোটার পর বুলি পাগল হয়ে যায়.. একা একা হাসে, কাঁদে, কথা বলে... তখন কেউ ওকে বিরক্ত করলে মারতেও যায়! আবার ভোর হলেই সব ঠিক হয়ে যায়। ভাই, তোর ভালোর জন্যই বলছি, তুই ওকে বিয়ে করিস না!'
-'আর তুমিও সবকিছু বিশ্বাস করে পিছটান দিলে?'
-'না দিয়ে আর উপায় কী? কিন্তু তারপর থেকে নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হতো। বুলিও জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে এমন করে তাকাতো... ওর ঐ দৃষ্টিকে আড়াল করতেই একদিন বাড়ি ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিলাম!'
-'বুলি এখন কেমন আছে জানো কি?'
-' হ্যাঁ... আজ পরেশদা'র কাছ থেকে জানলাম ওদের কথা...'
-'কী জানলে?'
-'কলি সুইসাইড করেছে।অলি কোন আশ্রমে চলে গেছে। মলি পালিয়ে গেছে কারো সঙ্গে আর বুলি? সে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গেছে...'
-'কী শোনালে গো!'
-'আর পরেশদা আজকে আরেকটা কথাও বললো যার জন্য বাকী জীবন আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না...'
-'কী?'
-' সেদিন পরেশ দা যা বলেছিলো, তার পুরোটাই ছিলো মিথ্যে!
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:28 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Bhattacharjee Madhumita
April 17 at 3:21pm
পান্তামনি
..........................................
মধুমিতা ভট্টাচার্য।
ছোট্ট কুঁড়েঘর,।। কিন্তু আলো আসে বেশ।
চন্দার মনি।। উঠোন ঝাড় দিতে দিতে গজগজ করে।
বড়কা টাই শেষ। ও না এলি কি খুতি হতো?..
ব্রজকুমার পুকুর থেকে নেয়ে এসে পান্তা চায়।
চন্দারমনির পান্তা ভাতের হাঁড়ি টা ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে বলে এবার মুর মুন্ডি টা গেল।। ব্রজ কুমার হাওয়া খুব সুবিধার নয় বুঝলো। কিন্তু সরে গেলেও হবেনা। জুয়ার আড্ডা তে বাকি পড়ে আছে। আজই দিতে হবে। ফলে চন্দারমনির গালি টা কে গায়ে না মেখে, জড়িয়ে ধরতে গেল ওর দুই বাহু, মুখ নামাতে গেল ওর দুই গালে।
যেই না ধরা আর যাবে কোথায় ব্রজকুমার।।।
গালিবর্ষণ।। তাও মুখে ব্রজকুমাররের হাসির রেখা মিলাইনা। টাকা তো তার আজ চাই। আর টাকা মানেই চন্দারমনি।
বলে মুই তোর ছুটকা বটে।। আদর দিবি লাই??
চন্দার বলে, দূর হ, যা মুর নজর আড়ালে।
শালা বেজন্মার ছুটকা।।
আরো গালি বর্ষণ।
ব্রজকুমার আপাতত সরে গেল, আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
ব্রজকুমার , চন্দারমনির কনিষ্ঠ স্বামী।
হ্যাঁ, কনিষ্ঠ। চন্দারমনির মোট চারটি স্বামী। দুটি পুরুষ বন্ধু ও আছে।
নষ্ট মেয়েমানুষ লোকে বললেও সে বলে আমি কাঙালমনি। একটু ভালবাসার পান্তা জল চাইছিলাম।
অতীতে প্রণয় আসক্ত হয়ে ঘর, গাঁ পালিয়ে সাদি করেছিল। বাউলানি র প্রেম চন্দারমনির। কাঙালিনি পান্তার মতো ভালোবাসা ছিল তার।
কিন্তু ভালোবাসার রূপ আরো প্রকাশ পায়, সাদির দুই বছর পর প্রথম স্বামী অন্য মেয়ে কে পালিয়ে যায়।
চন্দারমনির জনমজুরির বেতন এর জমানো টাকা আর তার রুপোর বালা গুলো ও নিয়ে যায় সাথে।
আগুন জ্বলে চন্দার বুকে। রাগে, দুঃখে অভিমানে অপমানে।
প্রতিশোধ জাগে তার কাঙালিনি পান্তা জলের বুকে।
ঠিক করে সেও ওই প্রথম স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতার
প্রতিশোধ নেবে, আর ওই হারামজাদা স্বামী কে দেখিয়ে দেবে সেও তার মতোই ভালো থাকতে জানে। তার কাঙালিনি পান্তা জলে ভালোবাসা খুঁজে নিয়ে ভালোবাসতে আসবে অন্য পুরুষ।
চন্দারমণী আবার সাদি করে। আবার ঠকে। প্রতিশোধের লেলিহান শিখা আরো জ্বলে ওঠে।
আর মনের মানুষ পেয়ে ঘর বাঁধতে চায় চন্দার।
এই করে চারটে সাদি করেও মানুষ তো পেলোনা, মনের মানুষ তো দূর।
সব মজা আর টাকা লুঠতে আসে, ধান্দায়। ধান্দা ফুরালে কেটে পরে।
চন্দারমনি চারটে সাদি করেও নিঃসন্তান।
একাই থাকে পলাতক চারটে স্বামীর প্রতি ঘৃণা আর দুটো বন্ধুর পুরুষ সুলভ প্রহসন নিয়ে।
পান্তা লাই গ আইড় পিত্থিবীর বুকে
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:24 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Saumitra Baishya
22 hrs
বোরহান উদ্দিনের পহেলা বৈশাখ
সুষুপ্ত পাঠক
পহেলা বৈশাখ এলেই আজকাল একজনের কথা আমার মনে পড়ে। ভদ্রলোক আর আমি পাশাপাশি ডেস্কে বসে কাজ করতাম এক সময়। চাকরি ছেড়ে দেবার পরও তার সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা হতো। এখনো হয় কালেভদ্রে।
আমাদের কলিগ সবিমল বসু ধর্ম নিয়ে প্যাঁচপ্যাচি ধরনের মানুষ। অফিস ছুটির পর দেখতাম কলা গাছের বাকল নিয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলে বলত বাড়িতে কি নাকি পুজা আছে। সকালবেলা কখনো হাঁটতে বের হলেও দেখতাম ফুল কিনছেন। বাড়িতে নিজেই পুজা দেন। ঠাকুর দেবতায় খুব ভক্তি। আমাদের জীবন থেকে বাংলা কেলেন্ডার উঠে গেলেও সুবিমলকে দেখতাম বাংলা মাসের তারিখ পর্যন্ত মনে রাখছেন। উনার সঙ্গে কথা বলে মজা পেতাম কারণ উনি উনার জীবনে এখনো ইংরেজি তারিখের সঙ্গে বাংলা তারিখটি সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। যেমন বৃষ্টি কম হচ্ছে, এ বছর বৃষ্টির দেখা নেই… সুবিমলদা বলে উঠতেন আষাড়ের আজকে ২ তারিখ ১৪ তারিখে রথযাত্রা। এর আগে বৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না…। কিংবা পৌষ ২২ চলছে কিন্তু শীতের দেখা নেই ইত্যাদি…।
এই সুবিমল কিন্তু আমার পাশের ডেস্কে বসতেন না। আসলে এই গল্প সুবিমলকে নিয়ে নয়। আমি শুরুতে যার কথা বললাম, যিনি আমার পাশের ডেস্কে বসতেন তিনি শেখ বোরহান উদ্দিন সাহেব।
তখনো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম লাইম লাইটে আসেনি, ৯৬ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিন বোরহান উদ্দিন সুবিমলকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, ও বাবু, আপনারা তো আজকা ইন্ডিয়া করবেন- ঠিক কইছি কিনা কন? বোরহান উদ্দিন সাহেবের ঠোটে চোরা শ্লেষ। সুবিমল বোরহান উদ্দিনকে একটু এড়িয়ে চলতেন। আমার সঙ্গেই তার সখ্যতা ছিল। বোরহান উদ্দিনের কথায় কাষ্ঠ হেসে বললেন, না দাদা, খেলা তেমন বুঝি না। দেখাই না। আগ্রহ নাই…।
বোরহান উদ্দিন আকাশ থেকে পড়লেন এমন ভান করে বললেন, ধুর মিয়া, মিছা কথা কন! আপনারা সব ইন্ডিয়া করেন। সব জানা আছে…।
সুবিমল বিব্রত ভঙ্গি হাসে। বলে, আমার ফুটবলের নেশা, ব্রাজিল করি…।
সুবিমল চলে যেতেই আমাকে নিচু গলায় বোরহান উদ্দিন বলল, হালারা করবো ইন্ডিয়া, কিন্তু মুখে স্বীকার করবো না!
আমি হেসে বললাম, আপনিও তো পাকিস্তান করবেন। উনি ইন্ডিয়া করলে দোষ কি?
বোরহান উদ্দিন আপত্তি জানিয়ে মাথা নেড়ে বলল, আমাদের পাকিস্তান করা আর তাদের ইন্ডিয়া করা এক না!
-কি রকম?
-এই যে দেখো তুমি তো মুসলমান, তুমি তো ইন্ডিয়ার সাপোর্ট করো আমি জানি। কিন্তু তুমি কোন হিন্দুকে পাকিস্তান করতে দেখেছো?
বোরহান উদ্দিনের কথায় সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে বললাম, বাংলাদেশের মানুষ কি করে পাকিস্তানের সমর্থন করে সেটাই আমার বুঝে আসে না…।
বোরহান উদ্দিন মাঝে মাঝেই আমার এরকম মতামতে রুষ্ট হতেন। সুবিমল বসু যে সব প্রশ্নে কাচুমাচু হয়ে হাত কচলে বিব্রত হয়ে হাসত, আমি তার হয়ে জবাব দিতাম, যুক্তিগুলো থাকত শক্ত, বোরহান উদ্দিন বিরক্ত হতেন আমার উপর। তুমি আগ বাড়াই কথা কও ক্যা? হেরে কইতে দাও…। তিনি চাইতেন আমি উনার সঙ্গে গলা মিলাই। একদিন বলেই ফেলেছিলেন, তুমি মিয়া হিন্দুদের এত পক্ষ নেও ক্যান কও তো?
একবার সুবিমল বসু অফিস থেকে ছুটি নিলেন ইন্ডিয়া যাবেন বলে। বোরহান উদ্দিন টেবিলে একটা চাপড় মেরে বলল, দেখছ, সারা বছর যা জমাইছে সব এখন রাইখা আসবো!
-উনি উনার মায়ের চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।
-ক্যা, আমাগো দেশে চিকিৎসা নাই? ডাক্তার নাই? আসল কথা চিকিৎসা যখন করামুই তখন দাদাগোই দিয়াই করাই, দাদারাই দুইটা পয়সা পাক- বুঝলা?
-ব্যাপারটা এরকম নয় বোরহান ভাই। উনাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন কোলকাতা থাকেন। তার মায়ের বয়স হয়েছে, সবার সাথে আর দেখা হবে কিনা… তাই আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, এটাও একটা কারণ। আর সত্যি কথা কি জানেন, আমার মেজো খালু কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন। এক ফুপা তিনিও ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসছেন। ইন্ডিয়া এম্বাসিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, দেখবেন চিকিৎসার জন্য যত মানুষ এপ্লাই করছেন তাদের ৯৫ ভাগই বাংলাদেশী মুসলিম। তারা নিশ্চয় দাদাদের সেধে পয়সা দিতে চাইবে না?
-ধুর মিয়া তুমি হইলা হিন্দুগো দালাল!
বোরহান উদ্দিন কলিগ হলেও দীর্ঘদিন একই অফিসে কাজ করাতে, বয়েসে বড় ভাইয়ের মত হওয়াতে উনার আমাকে নিয়ে এরকম কথা বলার একটা অধিকার জন্মে গিয়েছিল। আমিও এসব শুনে হাসতাম।
বোরহান উদ্দিন বৈশাখের জন্য ইলিশ কিনেছেন। যে বছর রমনায় বোমা ফাটল সে বছরের কথা। আমাকে বললেন, দুপুরে বাসায় যাইবা, তোমার দাওয়াত।…
সুবিমল বসু ডেস্ক থেকে গলা উচিয়ে বলল, ইলিশ কিনছেন নাকি দাদা?
কথাটা বোরহান উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে। বোরহান উদ্দিন আমাকে চোখ টিপে ইশারা করে বলল দেখো কি বলে, তারপর সুবিমলকে উদ্দেশ্য করে বলল, ও বাবু, বৈশাখে আমাগো দাওয়াত দিলেন না?
-সুবিমল হে হে করে হাসতে লাগলো। বলল, আমাগো বৈশাখের দিনে তো অফিস খোলা থাকব দাদা!
-ও আপনাগো তো দাদা আবার বৈশাখ পরদিন! তো দাদা, এইটা কিন্তু ঠিক না, দেশে থাকবেন কিন্তু দেশের নিয়ম মানবেন না- এটা কেমন কথা?
সুবিমল বিব্রত মুখে হাসে, হে হে হে…
বোরহান উদ্দিন আমাকে নিচু গলায় বলল, দেখলা তো, বৈশাখটা পর্যন্ত তাদের আলাদা! তোমরা খালি সেুক্যলার সেক্যুালার করো- আর হিন্দুরা যে ইন্ডিয়ার লগে মিল রাইখা বৈশাখ করতাছে সেইটা কিছু কও না ক্যা?
বোরহান উদ্দিনের উত্তেজনা দেখে আমার হাসি পায়। সেভাবেই বলি, বোরহান ভাই, আমাদের জন্মের বহু বছর আগে সেই ৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা ক্যালেন্ডার বানাইছিল যাতে পূর্ব বাংলার বাঙালীদের সঙ্গে কোলকাতার বাঙালীদের মধ্যে একই পালাপার্বন নিয়ে অনৈক্য থাকে। তাদের ভয় ছিল পাকিস্তান যে ধর্মীয় ঐক্যে গঠন হইছিল সেটা দুই পাড়ের বাঙালীদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ কোন ঐক্য গড়ে উঠলে পাকিস্তানের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে। আর আপনার তো মনে থাকার কথা ৮৮ সালে, আমরা তখন খুব ছোট, ৬৬ সালের সেই ক্যালেন্ডারটাই প্রচলন শুরু করে।… সুবিমল’দার কোন দোষ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। সারা বছর লোকনাথ ক্যালেন্ডার দেখে যিনি জীবন চালান, তার পক্ষে বৈশাখ কত তারিখে সেটা জেনেও অন্যদিনে পহেলা বৈশাখ কিভাবে পালন করা সম্ভব?
-ধুর মিয়া, তোমার সমস্যা আছে! বংশে কেউ হিন্দু আছিল নি?
আমি এবার জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। কেন হাসলাম সেটা বোরহান উদ্দিনও জানে। কথাটা বলেই তাই খুব বিব্রত হয়ে পড়ল। এই প্রথম আমার উপর খুব রাগ করে একটাও কথা না বলে চলে গেলো।
চাকরি ছেড়ে দেবার পর বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে আর রোজ দেখা হয় না। তবে মাঝে মাঝে পথে দেখা হয়। হাসতে হাসতে টিপ্পনী কাটেন, এই যে সেক্যুলার বাংলাদেশ! কি খবর কন? আমি আগের মতই হাসি। এই কয় বছরে বোরহান উদ্দিনের পরিবর্তন চোখে পড়ার মত। হজ করছেন। দাড়ি রেখছেন। কপালে নামাজের কড় ফেলার দাগটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শেষবার দেখা হয়েছিল গত বছর বৈশাখের পর রাস্তায়। বোরহান উদ্দিন এক সময় ইলিশ কিনে বাড়িতে বড় করে বৈশাখ করতেন। আমরা অফিস থেকে কয়েকজন গিয়ে তার বাসায় গিয়ে খেয়েও এসেছি। কিন্তু এবার সে প্রসঙ্গ তুলতেই একদম অন্যরকম এক বোরহান সাহেব বেরিয়ে আসলেন। বললেন, এইসব তো আমাদের মুসলমানদের জন্য ঠিক না। এই যে পোলাপান কিসব নিয়া নাচানাচি করে। মেলায় যায়, রাক্ষস-খাক্কসের ছবি নিয়া মিছিল করে… আমাগো মুসলমানদের তো অন্যদের মত হলে চলে না।…
-এবার ইলিশ কিনেন নাই?
-আরে না, না, কি বলো তুমি! এসব কোরআন-হাদিসের কোখাও নাই!
-ও!
-এই যে মাইয়াদের উপর যে কান্ডটা হইল, কেন হইল? এরকম বেয়াল্লাপনা অনুষ্ঠানে শয়তান সাক্ষাৎ নিজে দাঁড়ায় থাইক্কা বদমাইশি করতে শেখায়-বুঝলা?
-তার মানে আপনি এখন এই অনুষ্ঠানের মধ্যে নাই?
-মুসলমানের দুই ঈদ ছাড়া আর কোন উৎসব নাই…।
-তাহলে সুবিমলদা ভুল কিছু করেনি কি বলেন?
বোরহান উদ্দিন হাতের ঘড়ি দেখে বললেন , তোমারে আর সময় দিতে পারুম না। নামাজের সময় হইয়া গ্যালো ।
Posted by যাপনকথা । Japonkotha at 08:21 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Older Posts Home
Subscribe to: Posts (Atom)

About Me

My photo
যাপনকথা । Japonkotha
View my complete profile

Blog Archive

  • ▼  2016 (9)
    • ▼  April (9)
      • জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত April 21 at 1:00a...
      • Sibasish Chatterjee April 24 at 1:12am...
      • Bijoy Ghose April 24 at 8:15pm ...
      • Debleena Sengupta April 24 at 2:46pm ...
      • Bhattacharjee Madhumita April 17 at 3:...
      • যাপনকথা ফেসবুকের পাতায় প্রকাশিত গল্পগুলো এখনেও পড়...
Simple theme. Powered by Blogger.